স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর ‘সাদেক বাহিনী’ ও ‘দখলবাজ’ সাদেক খান ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন

চার মেয়াদে ওয়ার্ড কাউন্সিলর থেকে এমপি ছিলেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সাবেক এমপি সাদেক খান রাজনৈতিক জীবনে দখল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের এই ১৬ বছরে সাদেক খান নিজের নামে ও বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, শিয়া মসজিদ, আদাবর, বসিলা, ঢাকা উদ্যান, বুদ্ধিজীবী, জাফরাবাদ, পুলপাড়, গদিঘর, রায়েরবাজার নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৩ আসন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪নং ওয়ার্ড পুরোটাই এই আসনের অন্তর্গত। রাজধানীর এই বিশাল এলাকার  বেশির ভাগেরই নিয়ন্ত্রণ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খানের হাতে। মোহাম্মদপুর, কাটাশুর, জাফরাবাদ, বুদ্ধিজীবী, রায়েরবাজার, গদিঘর, বসিলা, ঢাকা উদ্যান এলাকায় তিনিই সর্বেসর্বা। তার মতের বাইরে যাওয়ার সাধ্য কারোর-ই নেই। নিজেদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ভয়ের রাজনীতি কায়েম করে এলাকাটিতে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, ফিলিং স্টেশন, কাঁচামালের আড়তসহ নামে বেনামে গড়েছেন অঢেল সম্পদ।সাদেক খান বংশগতভাবেই ‘দখলবাজ’। এমপি হওয়ার আগে চার মেয়াদে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন সাদেক খান। তখনই তার দখলবাজির হাতেখড়ি। ২০১৮ সালে এমপি হওয়ার পর থেকে তার সস্ত্রাসী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়।

সাদেক খানের দখল সাম্রাজ্যের ভাড়া ও চাঁদাবাজির টাকা ওঠানোর কাজ করতেন তার ছেলে ফাহিম খান। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে সাদেক খান ছেলেকে বানান দলের মোহাম্মদপুর থানা কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। বাবা ও নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ফাহিম খান নিজেও দখলবাজি ও চাঁদাবাজিতে কম যাননি। সাদেক বাহিনী ও সাদেক খানের পরিবারের চাঁদা আদায়ের জন্য ১০-১২ জন নিয়োগকৃত ম্যানেজার রয়েছেন। প্রধান ম্যানেজার জুলহাস বেপারি ও জাকিরের নেতৃত্বে ম্যানেজাররা একেক সাইড থেকে দৈনিক টাকা কালেকশন করে বুঝিয়ে দিতেন সাদেক খানের একসময়ের ড্রাইভার সুমনের হাতে। এই সুমনই প্রতিরাতে চাঁদার টাকা পৌঁছে দিতেন এমপিপুত্র ফাহিমের কাছে।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যাযজ্ঞে ছিলেন অন্যতম কুশীলব। তার নির্দেশে মোহাম্মদপুর-ধানমন্ডি এলাকায় আন্দোলন দমাতে হত্যাযজ্ঞ চালাতে রাজপথে থেকে অস্ত্রধারীদের দিকনির্দেশনা দেন।

ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, তার স্ত্রী মিসেস ফেরদৌসী খান ও ছেলে ফাহিম সাদেক খানের ২১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব হিসাবে ৪ কোটি ২০ লাখ ৭ হাজার ৬৮৬ টাকা রয়েছে।

সরকার পতনের পর গত ২৪শে আগস্ট রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়া এলাকা থেকে পুলিশের হাতে আটক হন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক এমপি সাদেক খান। পরে তাকে ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত ট্রাকচালক মো. সুজন (২৪) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Search