খাস কিংবা ব্যক্তিমালিকানা– মিরপুর এলাকায় ফাঁকা জমি মানেই তাতে নজর ইলিয়াসের। এক পর্যায়ে দখল করে মালিক বনে গেছেন। সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বস্তি বানিয়ে ভাড়া তুলেছেন। আর এসব অপকর্ম দেখভালে গড়ে তুলেছেন অর্ধশতাধিক সদস্যের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী।নির্বাচনী এলাকায় বিগত ১৬ বছর ইলিয়াস মোল্লাহর কথাই ছিল আইন। জমি ছাড়াও বহু দোকান, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড ও ফুটপাত দখলে নিয়েছেন। এসব নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে বাড়ির বৈঠকখানায় সালিশ বসিয়ে আদালতের আদলে বিচার করতেন। বিচার না মানলে নিজে মারধর করতেন। মামলা দিয়ে পুলিশে দেওয়ার হুমকিও দিতেন। বিচারের রায় পক্ষে দেওয়ার জন্য সহকারীদের মাধ্যমে ঘুষও নিতেন ইলিয়াস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাডার পাঠিয়ে শিক্ষার্থীদের শায়েস্তা এবং মিরপুর এলাকায় আন্দোলনে অতর্কিত হামলার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।পল্লবীর ঝিলপাড়ে দেখা যায়, সাংবাদিক সমিতির দখল করা জমির কিছু অংশে দোকানপাট, বস্তি ও ‘আইয়াজ এগ্রো ফার্ম’ নামে গরুর খামার।রাজধানীর তুরাগের ধৌর ও নলভোগ মৌজায় ইলিয়াস মোল্লাহ প্রায় ৭০০ একর সরকারি জমি দখল করে দোকানপাট করেছেন।
দুয়ারীপাড়ার ৪৭৩ প্লট নিয়ে ওয়াক্ফ এস্টেট ও গৃহায়ন অধিদপ্তরের মধ্যে একাধিক মামলা ছিল। এ সুযোগ কাজে লাগান ইলিয়াস মোল্লাহ। ১৯৮১ সালে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জায়গাটি সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়। কিন্তু ওয়াক্ফ এস্টেটের দাবি করে এটির দখল নেয় মোল্লাহ পরিবার। ১৯৯৬ সাল থেকে ধীরে ধীরে পুরো প্রকল্প নিয়ন্ত্রণে নেন ইলিয়াস। পরে দলিল ছাড়াই কেনাবেচা করে কোটি টাকা হাতিয়েছেন। জমি থেকে উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকেও বছরে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়েছেন তিনি।রূপনগর, দুয়ারীপাড়া, মিরপুর-১০ নম্বর, পলাশনগর, মানিকদী, ইস্টার্ন হাউজিং, আরামবাগ, মিরপুর-৬ ও ৭ নম্বর সেকশন, বাউনিয়াসহ সব পাড়া-মহল্লার ফুটপাত ও রাস্তার ওপর অস্থায়ী দোকানের ভাড়া ইলিয়াস মোল্লাহর অনুগতদের দিতে হতো। এসব কাজে পাড়া-মহল্লাগুলো ছয় থেকে সাতজনের গ্রুপে যুক্ত ছিল। রূপনগর টিনশেড কলোনি নামে পরিচিত এলাকাটিও ইলিয়াস মোল্লাহর আয়ের অন্যতম উৎস।
রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বরে অবস্থিত ঝিলপাড় বস্তি, এর একটি অংশ রয়েছে রূপনগরেও।বস্তির নিয়ন্ত্রক হিসেবে ইলিয়াস মোল্লার নাম ছিল ওপেন সিক্রেট। বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা ভাগে ভাগে চাঁদার অর্থ আদায় করলেও মূল কোষাগার ছিল সাবেক এই সংসদ সদস্যের বাড়ি। চাঁদা তোলা কর্মীদের মধ্যে অন্যতম ছিল ‘টাকলা হাবিব’। তিনি ময়লা কামালের আদেশে একাংশের চাঁদা তুলতেন। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আদায়কৃত চাঁদার অর্থ লতিফ মোল্লাকে দিতেন কামাল। লতিফ মোল্লা হয়ে এই অর্থ যেত ইলিয়াস মোল্লার কাছে। ইলিয়াস এই এলাকার মূল গড- গডফাদার।মোল্লার ইশারা ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না পল্লবীর।