সম্মান ছিল মুখোশ,ভেতরে ভয়ংকর পশুর চেয়েও খারাপ আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভার এক নম্বর সদস্য মোজাম্মেল

আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক ১৯৭৬ সাল থেকে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। টানা তিন মেয়াদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এলাকায় তার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, দলে গ্রুপিং তৈরি করে অন্য নেতাদের দমন, নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।ঘুষ, দুর্নীতি, নিয়োগবাণিজ্য, দখলবাজি করে তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক হলেও চলতেন সাদামাটা সততার লেবাসে। আওয়ামী লীগ আমলে দেশে ৫০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানোর অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। জেলা ও উপজেলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার মামলা ও নির্যাতন সবই হতো আ ক ম মোজাম্মেলের কথামতো। দীর্ঘসময় পুলিশ সুপার পদে সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনুর রশিদকে নিয়ে মানুষের ওপর চালিয়েছেন জুলুম নির্যাতন। পুলিশি সহযোগিতায় জুয়া, হাউজি ও মাদক সিন্ডিকেট থেকে কোটি কোটি টাকার চাঁদার ভাগ নেওয়ার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একটি লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে।

আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভার এক নম্বর সদস্য ছিলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। এ কারণে আলাদা গুরুত্বও পেতেন। তবে মন্ত্রিপরিষদের এত বড় একটি সম্মানজনক পদ ধারণ করলেও তার কাজকর্ম ছিল একেবারেই বিপরীতে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের তিন মেয়াদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া সনদ বাণিজ্য’ করার অভিযোগ উঠেছে। কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এক থেকে দুই কোটি টাকার বিনিময়ে ভুয়া সনদ দিয়েছেন। এভাবে তিনি প্রায় ২৫ হাজার ভুয়া সনদ বিক্রি করে হাজার কোটি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন-এমন অভিযোগ ’৭১-এর সম্মুখসারির একাধিক যোদ্ধার। তাদের মতে, শুধু ভুয়া সনদ বিক্রি করেই ক্ষান্ত হননি, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা ‘টেম্পারিং’ করে সনদ নিয়েছেন নিজেও।

জোঁকের মতো ঝুট ব্যবসা কামড়ে ধরেছিলেন আ ক ম মোজাম্মেল। কালিয়াকৈর পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক আবদুল ওহাব মিয়া মোজাম্মেলের ঘনিষ্ঠজন।মন্ত্রীর নির্দেশে প্রতি মাসে কারখানাগুলো থেকে অর্ধ কোটি টাকা পর্যন্ত উঠত। এই টাকার কিছু অংশ দলের তৃণমূল পর্যায়, অর্থাৎ ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা ও পৌর শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দেওয়া হতো। এই টাকা ৫ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্কের ছিল। টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করে দিতেন মন্ত্রী নিজেই।

ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আ.ক.ম. মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাও রয়েছে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের মতো তিনিও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

Search