ব্যাংকিং খাতে একজন জালিয়াত মাস্টার হিসেবেই পরিচিত ডিবিসি টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল আহসান

তিনি ব্যাংকিং খাতে একজন পরিচিত জালিয়াত মাস্টার, যিনি একাধিক ব্যাংককে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে চিহ্নিত করলেও, তিনি নতুনভাবে নিজের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মিডিয়া পাড়ায়ও তার ব্যাপক আধিপত্য রয়েছে এবং ডিবিসি টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন। জালিয়াতি করে তিনি এনআরবিসি ব্যাংক থেকে ৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ডিবিসি টেলিভিশনের মালিক হন। এছাড়া, সরকারের স্বৈরাচারী পদক্ষেপকে সমর্থন করে তিনি টেলিভিশনকে ব্যবহার করেছেন আন্দোলন দমনে। বর্তমানে, তিনি ডিবিসি টেলিভিশনের প্রধান হিসেবে মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলামকে রেখে বিভিন্ন সুবিধা নিচ্ছেন। তিনি শুধুমাত্র ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতি করেননি, বরং মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং মেঘনা ব্যাংকেও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এসব জালিয়াতি করে তিনি দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তবে তার কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে।

মো. শহীদুল আহসান, এজি এগ্রো ফুডস লি. গ্রুপের চেয়ারম্যান, আহসান গ্রুপ, এজি প্রোপার্টি ডেভলপমেন্টের চেয়ারম্যান এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, এক সময় জালিয়াতির মাধ্যমে মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং পরে তার বন্ধুর স্ত্রী কামরুন নাহার (সাখী) এর স্বাক্ষর জাল করে নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংককে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে উক্ত ব্যাংক দু’টি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হয়েছে।

এছাড়াও, শহীদুল আহসান এজি (আহসান গ্রুপ) এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, রিজেন্ট হোল্ডিংস, স্বদেশ বিল্ডার্স, ক্যাপিটাল হোল্ডিং এন্ড ডেভলপমেন্ট কো-অপারেশন, হোম অ্যাপারেলস, রাইমা ফ্যাশন, এজি সিরামিকস, আরএনএস করপোরেশন, এবং ফ্রেন্ডস ট্রেডার্সের মালিক। এসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে রয়েছে এবং কিছু প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিছু প্রতিষ্ঠান চললেও কর্মীদের ৬-৮ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।

২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, ব্যাংকে হিসাব খোলার আগেই শহীদুল আহসান এনআরবিসি ব্যাংকে বেগমগঞ্জ ফিড মিলস লি.-এর নামে ঋণের আবেদন করেন, যা আহসান গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শহীদুল আহসান তার ব্যবসার জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন করেন, যার ফলে ৩০১ কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়। এর ফলে এনআরবিসি ব্যাংক “ঝুঁকিগ্রস্ত” ব্যাংকে পরিণত হয়।

এনআরবিসি ব্যাংকের একজন সাধারণ গ্রাহক হলেও, শহীদুল আহসান মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যাংকটির পরিচালনায় প্রভাব বিস্তার করতেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, শহীদুল আহসান আইন লঙ্ঘন করে ঋণ পেয়েছিলেন, বেনামি শেয়ার কিনেছিলেন এবং অবৈধভাবে ব্যাংক পরিচালনার অংশ হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া, জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) ভাইস চেয়ারম্যানও হন।

মো. শহীদুল আহসান, এজি এগ্রোর নামে একাধিক ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন। এনআরবিসি ব্যাংকেও তিনি জালিয়াতি করে বেনামী শেয়ার হোল্ডার তৈরি ও আধিপত্য বিস্তার করেছেন। তিনি মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে এনায়েত হোসেন, ফিরোজ হোসেন খান, তুষার ইকবাল এবং আমির হোসেনের নামে ঋণ নিয়ে, সেই ঋণের টাকা এনআরবিসিতে বেনামী শেয়ার কিনতে ব্যবহার করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার দুটি প্রতিষ্ঠানকে এনআরবিসি ব্যাংক ৩০১ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা ব্যাংকটির মূলধনের ৫৬ শতাংশ। এ ঋণ দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘একক গ্রাহকের ঋণসীমা’ নীতি লঙ্ঘন এবং এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তার বেনামি শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার যোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

Search