দুর্নীতির মানসপুত্র রাজনীতির অন্তরালে সন্ত্রাসের গডফাদার মায়ার অপকর্মের ফিরিস্তি

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া: মুক্তিযোদ্ধা থেকে বিতর্কিত মাফিয়া ডনের অভিযুক্ত রূপান্তর। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে একসময়ের প্রশংসিত এবং বর্তমানের ব্যাপক বিতর্কিত এক নাম। মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করে ‘বীর বিক্রম’ খেতাবপ্রাপ্ত এই নেতা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৬-২০০১ সালে এবং ২০১৪-২০১৮ সালে চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সেই সাথে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

তবে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের এই উজ্জ্বল অধ্যায়কে ছাপিয়ে গেছে তার বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ। ২০০৭ সালে তার এবং পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০০৮ সালে তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং কয়েক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। যদিও উচ্চ আদালতে আপিলের মাধ্যমে তিনি পরবর্তীতে মুক্তি পান, কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন সেই রায় চ্যালেঞ্জ করলে আবার মামলাটি আলোচনায় আসে।

সাম্প্রতিক সময়ে মায়ার বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ উঠে আসে। তাকে একটি পর্যটন কেন্দ্র দখল, সাধারণ মানুষ ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, সাংবাদিকদের উপর হামলার চেষ্টা ও প্রশাসনকে প্রভাবিত করে নিজের স্বার্থ হাসিলের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র দখলের ঘটনায় কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানা যায়। এমনকি সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তার নাম উঠে আসে এবং থানায় আশ্রয় নেওয়া সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয় পুলিশ প্রশাসন।

২০২৪ সালের নির্বাচনেও তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়, যেখানে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী তার বিরোধিতা করেন এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিপুল জনসমর্থন পান। কিন্তু নানা অনিয়মের মাধ্যমে ভোটে জয়ী হন মায়া এবং এরপর থেকেই শুরু হয় তার প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি।

সবশেষ ২০২৫ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার আর খোঁজ মিলছে না। তিনি দেশত্যাগ করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন তার অবৈধ সম্পদের উৎস ও কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্ত করছে এবং তার ও তার স্ত্রীর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা থেকে বিতর্কিত রাজনীতিক হয়ে ওঠার এই যাত্রাপথ আজ দেশের সাধারণ মানুষ এবং রাজনীতিবিদদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।

Search