খুনি হাসিনার মদদকারি জাহিদ মালেকের সাম্রাজ্য পতনের পথে: এক সাবেক মন্ত্রীর ‘দুর্নীতি ও দখলের’ কাহিনি

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনের চারবারের সংসদ সদস্য জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে উঠেছে ভয়াবহ দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দখলদারিত্বের বিস্তৃত অভিযোগ। এক সময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা এখন আত্মগোপনে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই তার সাম্রাজ্যের নানা অন্ধকার দিক উন্মোচিত হতে শুরু করেছে।

রাজনীতির ‘সিন্ডিকেট কনট্রোল’ থেকে সম্পদের পাহাড়ে আরোহন
জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতা তৈরির পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন জাহিদ মালেক। অভিযোগ রয়েছে, দলের পদ-পদবি বাণিজ্য করতেন তিনি ও তার ছেলে রাহাত মালেক। একাধিক নেতার দাবি, ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে উপজেলা ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে পদ দেওয়া হতো।

অর্থ উপার্জনের উৎস: বালু মহাল, পরিবহন, কৃষকের সার
জেলায় প্রায় সব বালু মহালই ছিল তার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। মাসিক মাসোহারায় বালু ব্যবসা চলত, আর মাসোহারা দিতে দেরি হলেই পড়তে হতো পুলিশি হয়রানিতে। পরিবহন খাতে জিপি (যাত্রী পরিবহন) চাঁদার নামে প্রতিটি গাড়ি থেকে ২,০০০ থেকে ২,৫০০ টাকা আদায় হতো। একইভাবে কৃষকদের জন্য বরাদ্দ সরকারি সারও কালোবাজারে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সরকারি কাজ, ঠিকাদারি ও নিয়োগেও ছিল প্রভাব
সরকারি প্রকল্প, বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতে, তার পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া কেউ কাজ পেত না। বহু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করেও বিল না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার নামে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জমি দখলের অভিযোগ
জেলার অধিকাংশ স্কুল-কলেজে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে নিজের লোক বসাতে চাপ প্রয়োগ করতেন। এমনকি অযোগ্য হলেও তার সুপারিশে তাদেরই মনোনীত করতে হতো। এতে শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি, সরকারি জমির দাম বাড়িয়ে আত্মসাৎ এবং ব্যক্তিগত মালিকদের জমি জোরপূর্বক দখল করে সেখানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার তৈরি করেছেন বলে জানা গেছে।

গণবিক্ষোভের পর আত্মগোপন
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকেই মানিকগঞ্জে ছাত্র-জনতা ও ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। অনেকেই জানান, এতদিন মালেক বাহিনীর ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারেননি। বর্তমানে জাহিদ মালেক ও তার ঘনিষ্ঠ অনুগামীরা আত্মগোপনে থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সুজনের আহ্বান: নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস বলেন, “এই ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও জনভোগান্তির বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ দরকার। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়।”

Search