আওয়ামী ফ্যাসিবাদের টানা ১৭ বছরের শাসনামলে, যে ক’জন বেপরোয়া এমপি-মন্ত্রী ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি হাসিনা সরকারের খাদ্যমন্ত্রী এবং আইন ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, মামলা-হামলা, বিরোধীদল-মত দমন, সংবাদপত্রের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ, সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ, বিচারের নামে রাজনৈতিক হত্যা, অর্থ পাচার-আত্মসাৎ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, গণহত্যা ও প্রোপাগান্ডা— সবকিছুর পেছনে ‘মাস্টার মাইন্ড’ ছিলেন এই কামরুলই।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে যে কয়েকজন বেপরোয়া এমপি-মন্ত্রী ছিলেন, তাদের অন্যতম এই কামরুল। তিনি এতটাই বেপরোয়া ছিলেন, প্রায় সময়ই তাঁর ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও বেপরোয়া বক্তব্য এবং অতিকথন জনমনে বিরক্তি তৈরি করেছে। বিরোধী দল ও মত দমনের ‘মহাস্ত্র’ হিসেবে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আইন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে নিম্ন আদালতে অধিকাংশ কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিতেন। আবার খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালে ব্রাজিল থেকে ‘পচা গম’ কিনে আত্মসাৎ করেন সরকারের কয়েকশ কোটি টাকা। সেই সময় তাঁর নামকে বিকৃত করে ‘গমরুল’ উপাধি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ক্ষমতায় থাকতে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও মামলা-হামলায় ইন্ধনের অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। মন্ত্রী-এমপি হয়েই হঠাৎ তাঁর নামের আগে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা নিয়েও রয়েছে গুরুতর প্রশ্ন।
কামরুল ইসলাম বিগত সরকার আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।কামরুল ইসলামের ১৫টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ১৫ কোটি ১৮ লাখ ১৫ হাজার ৪৬৫ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আইন ও বিচার বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, বিচার বিভাগ ও উচ্চ আদালতের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে— ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠনের অন্যতম সদস্য হাকিম হাফেজ আজিজুল ইসলাম তার বড় ভাই। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কামরুল তার ভাইয়ের মালিকানাধীন প্রিন্টিং প্রেসে ‘ম্যানেজার’ হিসেবে কাজ করতেন। সে সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ‘ইবলিশের দিনলিপি’ নামে সপ্তাহিক বিশেষ সম্পাদকীয় প্রকাশ করতেন তিনি।
গত ১৮ নভেম্বর,২০২৪ রাজধানীর উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর থেকে কামরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় গ্রেফতার হয়েছে।