কাজী হাবিবুল আউয়াল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, সহিংসতা ও বিতর্কের কারণে তিনি সমালোচিত হন।
🗳️ নির্বাচনী অনিয়ম ও সহিংসতা
- গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন (২০২২): এ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে নির্বাচন বাতিল করা হয়।
- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০২৪): এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল এবং বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। নির্বাচনের শেষ দিকে এসে জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের অনেক প্রার্থী অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ান। হাবিবুল আউয়াল কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করলেও অনিয়মের অভিযোগে নয়টি আসনের ২১ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
🗳️ রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম
- রাজনৈতিক দল নিবন্ধন: ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে অনেকগুলো দল আবেদন করে। শর্ত পূরণ করার পরও চারটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে।
- কমিশনের পদত্যাগ: ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন পদত্যাগের ঘোষণা দেয়। এর আগে ৭ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় এবং পরদিনই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা শপথ নেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই পদত্যাগ করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনও পদত্যাগ করে।
⚖️ সমালোচনা ও বিতর্ক
হাবিবুল আউয়ালের আমলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিকরা তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব, দুর্নীতি ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি অনাস্থার অভিযোগ তোলেন। তবে সিইসি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “নির্বাচন কমিশন কোনো আর্থিক লেনদেনে সম্পৃক্ত থাকে না,” এবং “গুরুতর অনিয়ম ও অসদাচরণের কোনো বিষয় প্রচার হয়নি।”
সার্বিকভাবে, কাজী হাবিবুল আউয়ালের আমলকে বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।