১৫ই আগস্টের অবিষ্যম্ভাবী পরিনতির পরে খন্দকার মোশতাক সরকার কর্তৃক গঠিত তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ১৬ থেকে ২৮ শে আগস্ট পর্যন্ত সরেজমিনে তদন্ত করে ঐ দুর্গের ভেতরে প্রাপ্ত মালামালের একটি জব্দ তালিকা করেন যা ৩০ শে আগস্ট মোশতাক সরকার একটি রাষ্ট্রীয় শ্বেত পত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ঐ জব্দ তালিকা ছিল দীর্ঘ ৭১ পৃষ্ঠার যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে একেবারে মিলে যায় খাপে খাপ.., কি প্রহসনের মিল, তাই না??
একজন ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদ যিনি সময়ে অসময়ে, স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটিয়েছেন , সমাজ স্বীকৃত দৃশ্যমান কোন ব্যবসা বা চাকরি করেননি বরং জীবনের অল্প কিছু সময় (কয়েক মাস) একটা ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে ৭৫ টাকা বেতনে কেরানির চাকরি করেছেন, তার বাড়িতে যৎসামান্য যা কিছু পাওয়া গিয়েছিল তা নিন্মরুপ:-
৩০ শে আগস্ট ১৯৭৫, মোশতাক সরকার কর্তৃক প্রকাশিত জব্দ তালিকা যা তখনকার বেশ কিছু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল:-
৫০৩ ভরি স্বর্ন ॥
৪ হাজার ৫৪ তোলা ( প্রায় আধা মণ) রুপার অলংকার ।
নগদ ৭৪ হাজার ২ শত ১৯ বাংলাদেশী টাকা।
৯ হাজার ৮৮ ভারতীয় রুপি ।
৪২৫ আমেরিকান ডলার ।
৮৮ পাউন্ড স্টার্লিং ।
এবং ২২০ টাকা মুল্যের প্রাইজ বন্ড ।
বিদেশি রাষ্ট্র হতে প্রাপ্ত প্রায় ১ লক্ষ টাকা মূল্যের উপহার সামগ্রী।
আগ্নেআস্র পাওয়া গেছিলো:-
৩ টি মার্ক ফোর রাইফেল ।
১ টি ৩০৩ রাইফেল ।
.৩২ বোরের দুইটি রিভলভার
ম্যাগজিন সহ ১ টি এস এল আর।
২ টি ম্যাগজিন ও ৭৮ রাউন্ড গুলি সহ ২ টি এস এম জি( সাব মেশিন গান)।
১ টি চায়নিজ রাইফেল ।
পয়েন্টে ২২ (.২২) বোরের একটি রাইফেল ।
ম্যাগজিন সহ ১ টি ব্রেটা গান
২৩৭ টি গুলি সহ একটি জি ও থ্রি রাইফেল ।
৮ টি ষ্টেন গান।
২ বাক্স গুলি সহ ১টি মার্ক থ্রি রাইফেল, যার মধ্যে ১ টি বাক্স খোলা এবং সম্পূর্ণ ব্যবহৃত।
২ টি অব্যবহৃত গ্রেনেড ।
১ টি এয়ার গান ।
কোনটারই বৈধ কাগজপত্র ছিলো না।
১৯৮১ সালের ১৬ই জুন জিয়াউর রহমানের সরকার জব্দকৃত সমুদয় মালামাল শেখ হাসিনার নিকট হস্তান্তর করা হয়…॥
একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ৯ জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্য পিতামাতার সমুদয় মালামাল শেখ হাসিনাকে বুঝিয়ে দেন।
সাক্ষীদের মধ্যে তখনকার সংসদ সদস্য শেখ সেলিম ও সংসদ সদস্যা সাজেদা চৌধুরী এবং অন্যান্য আত্বীয় স্বজনের উপস্থিতিতে হাসিনা হাসিমুখে সমস্ত মালামাল বুঝে পেয়ে
সরকারী তালিকায় “আগ্নেআস্র ব্যতিত সমস্ত মালামাল বুঝিয়া পাইলাম” মর্মে স্বাক্ষর দান করে।
অস্র ও গোলা বারুদ যুক্তিগ্রাহ্য কারণেই ফেরত দেয়া হয়নি, কারণ সবগুলি অস্রই ছিলো লাইসেন্স বিহীন, অবৈধ।
আমার সরল মনে প্রশ্ন জাগে…..
জমিটা সরকারি দানে প্রাপ্ত হবার পরেও আছেন এমন কোন এ্যকিন, মুনী, ঋষি, পীর, আউলিয়া, দরবেশ, ওলামায়ে কেরাম, কুতুববাগী বা বাগদাদী বুজুর্গ যিনি ৭৫ টাকা বেতনে ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে কয়েক মাস চাকরি করে ধানমন্ডির ঐ জমিতে , নিদেন পক্ষে একচালা টিনের ঘর তুলতে পারতেন, পারবেন???
তাহলে পশ্চাদপর , কূপমণ্ডুপ, অঁজ পাড়া গ্রাম থেকে উঠে আসা অশিক্ষিত, গন্ড মূর্খ , নিম্নবিত্ত পরিবারের একজন বাকপটু গুন্ডা, অতি অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে ঐ প্রাসাদোপম বাড়ি করলেন??
এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবারই জানা ছিলো, জানা আছে; তবে গত ১৬ বছর তা উচ্চারণ করতে দেয়া হয়নি…।
লিপিবদ্ধ দালিলিক ইতিহাসেও তা বর্নিত আছে:-
৩২ নম্বরের কলংকিত ইতিহাস নিয়ে বদরুদ্দীন ওমর যা লিখেছেন:-
“দুর্নীতি নির্মূল করার জাঁকালো ঘোষণা সত্বেও , আওয়ামীলীগের নেতারা এবং সরকারে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা এমন প্রবল উৎসাহে দুর্নীতি মূলক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়লেন যা, ১৯৪৭ এর পর থেকে , মুসলিম লীগের রাজত্বে হোক বা আবু হোসেন সরকারের মন্ত্রীসভার সময়ে হোক, কখনোই পূর্ব পাকিস্তানে দেখা যায়নি।
শেখ মুজিবর রহমান দুর্নীতি দমন মন্ত্রী হয়েও খুবই অশোভন ভাবে স্বয়ং দুর্নীতিতে মদত দিয়েছিলেন এবং সংক্ষিপ্ততম সময়ের মধ্যে যথেষ্ট অর্থ সম্পদ রোজগার করেছিলেন।অচিরেই তিনি ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় একটা বড় বাড়ি তৈরি করেছিলেন এবং সেটা আদতে দুর্নীতির একটা স্মারক।
অল্প সময়ের মধ্যে এই এলাকাটি আওয়ামী লীগ কলোনিতে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাই সেখানে বাড়ি তৈরি করে উঠে গিয়েছিলেন।”
বাংলাদেশের অভ্যুদয়, ১ম খন্ড
পুর্ব পাকিস্তানের ইতিহাস (১৯৪৭-১৯৫৮) ২০২২
পৃষ্ঠা ৩৮১